ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম আর নেই

অনলাইন ডেস্ক :: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মারা গেছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছিল তার জীবন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার (১৩ জুন) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। বিডিনিউজ
নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের কাছে এই খবর পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সিইও আল ইমরান বলেন, “সকাল ১১টা ১০ মিনিতে তিনি (নাসিম) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১ জুন থেকে ঢাকার শ্যামলীর এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন নাসিম।
করোনাভাইরাসমুক্ত হলেও এর মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক হলে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। পরিবার বিদেশে নিতে চাইলেও সেই অবস্থাও ছিল না বলে চিকিৎসকরা জানান।
বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ নাসিম গত ১ জুন হাসপাতালে ভর্তির আগে একবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করালে ফল ‘নেগেটিভ’ আসে। ওই সময় তার স্ত্রী এবং একজন গৃহকর্মীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে।
পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেও জ্বর-কাশিসহ অন্যান্য অসুস্থতা বাড়তে থাকায় ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। সেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে ওই পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ আসে।
এরপর তিন দিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন সকালে তার ‘স্ট্রোক’ হয় বলে নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় জানান। এরপর সেখানেই নাসিমের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
ওই বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছিলেন, ‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় যাওয়ার পর থেকেই ‘লাইফ সাপোর্টে’ রয়েছেন নাসিম।
এরপর গত ৮ জুনের পর দুই দফা তার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ফল ‘নেগেটিভ’ এলেও লাইফ সাপোর্ট সরানো সম্ভব হয়নি। তার মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, আগামীকাল রবিবার বনানী কবরস্থানে নাসিমের দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে তার ছেলে তানভীর জানিয়েছেন।
নাসিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শোক জানিয়েছেন বলে জানান বিপ্লব বড়ুয়া।
নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মৎ আমেনা মনসুরের ঘরে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মনসুর আলী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নাসিম স্বাধীনতার পর ১৯৯৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে মনসুর আলীকেও হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন নাসিম। তখন কারাগারেও যেতে হয়েছিল তাকে।
১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্বও পান তিনি। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।
রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম সংসদে পঞ্চমবারের মতো সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
এবার মন্ত্রিত্ব না পেলেও দলের সভাপতিমণ্ডলীতে থাকার পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন নাসিম।

পাঠকের মতামত: